গল্পটা বেশ পুরাতন। নিজের একটা ওয়েবসাইট (ব্লগ) থাকার কারনে অনেক আগে থেকেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে মোটামুটি ভালো ধারনা ছিল। সেই ওয়েবসাইটের প্রয়োজনে ২০১২ সালে প্রথম একটা ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন ডেভেলপ করি। এরপর ২০১৪ সালে আরেকটা প্লাগিন ডেভেলপ করি। যদিও সেগুলো নিজের প্রয়োজনে করেছিলাম, কিন্তু পরবর্তীতে অন্যদের মাঝেও সেগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে টুকটাক আয় করার মতো দক্ষতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু অনলাইনে এসব কাজ করে যে আয় করা সম্ভব সে সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা ছিল না। সবকিছুই করতাম শখের বশে আর ভালো লাগার কারনে। আমার ওয়েবসাইটটা ছিল মূলত ব্লগ। টুকটাক ভিজিটরও আসতো বেশ। কিন্তু এখানে Google Adsense যুক্ত করে যে আয় করা সম্ভব তাও জানা ছিল না আমার।
শখের কাজ যখন উপার্জনের মাধ্যম
কিন্তু ২০১৬ সালে এসে সবকিছু বদলে যেতে শুরু করে। সম্ভবত সে বছরের প্রথম দিকে দেশের বাইরে থেকে প্রথম একটা কাজের জন্য মেইল পাই। কিন্তু যেহেতু আগে কখনো এভাবে কারো জন্য কাজ করিনি, তাই সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারলাম না। মেইলের উত্তরে লিখেছিলাম, আমি এই মুহুর্তে এ ধরনের কাজ করছি না। যতদূর মনে পড়ে এভাবে একাধিক কাজের অফার ফিরিয়ে দিয়েছি। আর অনলাইন মার্কেটপ্লেসের নামই শুধু শুনেছি, তখনও পর্যন্ত জানার বা বোঝার চেষ্টা করিনি কখনো।
ঐ বছরের শেষের দিকে USA এর এক ব্যক্তি আমাকে মেইল করে। তার প্রতিষ্ঠান মূলত ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে। তারা একটা ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপ করেছে যেটাতে আমার তৈরি একটা প্লাগিন ব্যবহার করেছে। তারা খুশি হয়ে আমাকে কিছু টাকা দিতে চায়। আমি টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন ২৫ ডলার এবং আমার পেপাল আইডি চাইলেন।
আমি ভাবলাম, বাহ! দারুণ ব্যাপার তো! কাজ না করেও টাকা পাওয়া যায়!
যাই হোক, তিনি মনে হয় জানতেন না যে, বাংলাদেশে পেপালের সার্ভিস নেই। তবুও আমি বললাম পেপাল আইডি দিচ্ছি।
প্রথম পেপাল অ্যাকাউন্ট, প্রথম পেমেন্ট
সাথে সাথে বিভিন্ন ব্লগ সাইট ঘেটে বাংলাদেশ থেকে পেপাল অ্যাকাউন্ট খোলার উপার বের করলাম। এরপর USA এর ফেক অ্যাড্রেস, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি ব্যবহার করে একটা পেপাল অ্যাকাউন্ট খুলে ফেললাম। ঐ ব্যক্তিকে আমার পেপাল আইডি দিলাম এবং কিছুক্ষণের ভেতর ২৫ ডলার পেমেন্ট চলে আসলো।
এরপর ঐ ব্যক্তির সাথে আরও কিছু আলাপ হয়েছিল। আমার সিভি চেয়েছিলেন, কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় কিনা দেখবেন বলে। আমি জানতাম আমার সিভি দিয়ে কিছু হবে না কারন আমার পড়াশোনা তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক না। তারপরও যেহেতু চেয়েছিলেন, আমি পাঠিয়েছিলাম।
প্রথম লস
ফেক তথ্য দিয়ে খোলার পরও পেপাল অ্যাকাউন্ট ঠিকঠাকই ছিল। তবে আমি আরও কিছু ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট ফুল ভেরিফাই করতে গিয়েছিলাম। সাথে সাথেই আমার অ্যাকাউন্টটা লিমিট করে দেয়। ব্যাস, সব শেষ। যেহেতু ভুয়া তথ্য দিয়ে খোলা তাই ঐ অ্যাকাউন্ট আর ঠিক করা সম্ভব হলো না। সেই সাথে জীবনের প্রথম আয়কৃত ডলারও হারালাম!
এভাবেই শুরু হয় অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পথে আমার যাত্রা।